The Daily Bhorer Kagoj has published the news of the webinar (Integrity Management: Progress, Challenges and Way Forward) held yesterday.
কাগজ প্রতিবেদক : স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, বিভিন্ন খাতে আমাদের অর্জন যেমন রয়েছে তেমনি বহু খাতে আমরা পিছিয়েও আছি। এসডিজি গোল ছাড়াও ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশে রূপান্তরিত হওয়ার বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে। সে কারণে ইন্টিগ্রিটি ম্যানেজমেন্ট বাস্তবায়নে কোনো ধরনের অবহেলা করার সুযোগ নেই। কেননা, এটা একটা মৌলিক ইস্যু। এটা শুধুমাত্র ওয়াশ, ওয়াটার এবং হাইজিন সেক্টরের বিষয় নয়। সব জায়গাতেই এ বিষয়টিতে মনোযোগ না দিলে আমরা কিন্তু আমাদের লক্ষ্য অর্জনে বাধাগ্রস্ত হব। এ বিষয়ে দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
গতকাল বুধবার সকালে এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ, বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক, ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (জার্মান) ও ভোরের কাগজের যৌথ আয়োজনে ‘ওয়াশ ইন্টিগ্রিটি ম্যানেজমেন্ট : প্রগ্রেসেস, চ্যালেঞ্জেস এবং ওয়ে ফরোয়ার্ড’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
মো. তাজুল ইসলাম বলেন, যদি বাধাগুলোকে সুস্পষ্টভাবে বলতে হয় তাহলে সবচেয়ে আগে আসে দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে আমরা একটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছি। আর সেটার কারণ হচ্ছে অটোমেশন। এর মাধ্যমে নাগরিকদের সব ধরনের সেবা দেয়া যেতে পারে। কীভাবে কোন কোন খাতে কী ধরনের সেবা দেয়া উচিত তাও এ অটোমেশনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যেতে পারে।
স্যানিটেশনের বিষয়ে তিনি বলেন, সøাশ ট্রিটমেন্টের জন্য একটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম আছে, সেজন্য যেসব স্যুয়ারেজ লাইন আছে সেগুলোকে মেরামত করতে হবে। সেফটি ট্রাকগুলো কার্যকর নয়। এ বিষয়ে গুলশান লেকের উদাহরণ দেন তিনি। এছাড়া সার্ভিস লাইনগুলো ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ওয়াশ, স্যানিটেশন ও হাইজিনের ব্যাপারে আমাদের যে প্রতিশ্রæতি রয়েছে, সেটা অর্জন করতে হলে আমাদের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা ও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
ওয়েবিনারের সঞ্চালক ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের যে ১৭টি লক্ষ্য আছে তার মধ্যে ৬ নম্বরটি হচ্ছে সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এটা বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ওয়াসা এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ বিষয়ে দেশের ওয়াসাগুলো বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ওয়াশ ম্যানেজমেন্টের একটি দুর্বল দিক আছে। আর তা হলো ইন্টিগ্রিটি ম্যানেজমেন্টের সমস্যা। এটি দূর করতে হবে। আমাদের
একটি জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্র আছে, তার আলোকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথের নির্বাহী পরিচালক এস এম এ রশীদ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ২০১০ সালে জাতিসংঘ নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তবে এ বিষয়ে বিশ্বের বহু দেশ পিছিয়ে রয়েছে। যদিও বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়ার মধ্যে অপেক্ষাকৃত ভালো। তিনি বলেন, এসডিজি গোলের ৬ নম্বরে আছে সবার জন্য পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করা। এসডিজি অর্জনে আমাদের পানি ও স্যানিটেশনের লক্ষ্যমাত্রার দিকে গুরুত্ব সহকারে নজর দিতে হবে।
ইন্টিগ্রিটি ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পের ফোকাল পারসন, এনজিও ফোরাম ও বাংলাদেশ ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক কাজী মনির মোশারফ তার উপস্থাপনায় বলেন, বাংলাদেশে ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের পানির প্রাপ্যতা থাকলেও নিরাপদ পানির আওতায় রয়েছে ৪৩ শতাংশ মানুষ। তাই ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ওয়াটার গভর্নেন্স শক্তিশালী করা, দুর্নীতি রোধ ও ইন্টিগ্রিটি ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, আমরা ২০০৯ সালে একটা রিফর্ম প্রকল্প চালু করি, টোটাল ইনস্টিটিউশনাল রিফর্ম, যার মধ্যে ইন্টিগ্রিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি ছিল। আমাদের দুর্নীতি দূর করতে হলে দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা সৃষ্টি করতে হবে এবং দুর্নীতির স্থানগুলো চিহ্নিত করতে হবে। খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ বলেন, খুলনা ওয়াসায় ইন্টিগ্রিটি ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত ও দুর্নীতি দূর করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতিতে মিটার রিডিং, বিলিং সিস্টেম ও ই-প্রকিউরমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। যার ফলে খুলনা ওয়াসা সুফল পেয়েছে এবং জনগণ সে সুফল ভোগ করছে বলে জানান তিনি।
রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকির হোসেন খান বলেন, যেহেতু জাতীয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কৌশলে বলা হয়েছে, পানিতে মানুষের সমঅধিকার রয়েছে, তাই আমরা চেষ্টা করছি সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে এর সুফল পৌঁছে দেয়ার।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ডিএমডি তাহেরা ফেরদৌস বলেন, আমরা ওয়াশ প্রোগ্রামের বেশ কিছু চেঞ্জ এনেছি এনজিওদের সহায়তায়। চট্টগ্রাম ওয়াসার বড় চ্যালেঞ্জ হলো ওয়াটার ট্যারিফ নেই। এটা সরকারের কাছ থেকে লোনের মাধ্যমে সম্পন্ন করছি। এ লোনটা পরিশোধ করা বড় চ্যালেঞ্জ। পাবলিক হেলথের প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমান বলেন, পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ৯ হাজার কোটি টাকার একটা প্রকল্প নিয়েছি। যার মাধ্যমে আমরা সারাদেশে গ্রামীণ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বর্তমানে ৪৯টি প্রকল্প চালু রয়েছে। এসডিজির জন্য আমাদের পানির নিশ্চয়তা দিতে হবে।
বাউয়িন-এর চেয়ারপারসন ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল হাসান বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করা এবং এ ক্ষেত্রে যাতে স্বচ্ছতা আসে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের ড. আনোয়ার জাহিদ বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পানির চাহিদা বাড়লেও রিসোর্স কমে যাচ্ছে। সেজন্য অনেক স্থানে পানি নিয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে তিনি বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ওপর জোর দেন।
বি স্ক্যানের সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব বলেন, নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ইন্টিগ্রিটি বা ওয়াটার, স্যানিটেশন ও হাইজিন বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। সিমাভির (নেদারল্যান্ডস) কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর অলোক মজুমদার বলেন, ওয়াটার ইন্টিগ্রিটি নিশ্চিত করতে ওয়াটার সেক্টরে কী ধরনের অভিযোগ আসছে আর কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তা নির্ধারণ করতে হবে।
ইউএসটির নির্বাহী পরিচালক শাহ মো. আনোয়ার কামাল বলেন, সুপেয় পানি প্রাপ্তি ও হাইজিন ম্যানেজমেন্টে দরিদ্র মানুষের জন্য পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদের কী পরিকল্পনা তা নিশ্চিত করতে হবে। ওয়াটার এইডের রঞ্জন কুমার ঘোষ বলেন, অটোমেশনের জায়গাটায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম যে নির্দেশনা দিলেন তা সবাই মিলে প্র্যাকটিস করতে হবে। ডরপের জোবায়ের হোসেন ওয়াটার ম্যানেজমেন্টে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন খান ওয়াটার পলিসিতে কাজের সমন্বয় সাধনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান। এলজিইডির (পিএসবি) জয়েন্ট সেক্রেটারি নুমেরী জামান বলেন, ইন্টিগ্রিটি নিশ্চিত করার জন্য যে সাপ্লাই চেইন ও যারা গ্রহণ করছে এ দুটো জায়গাতে যে গ্যাপটা রয়েছে, তা দূর করতে অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া অনুষ্ঠানে এনজিও ফোরামের বিভিন্ন জোনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।